পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর নির্মিত একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু।
পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলা যুক্ত হয়েছে। পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর অববাহিকায় ৪২টি পিলার ও ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১টি স্প্যানের মাধ্যমে মূল অবকাঠামো তৈরি করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাসের এই সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরে একটি একক রেলপথ রয়েছে।
সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয়। এই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে টোল প্রদান করে প্রথমবারের মত আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুতে আরোহন করেন এবং এর মাধ্যমে সেতুটি উন্মুক্ত করা হয়।
অংশ | বিবরণী |
---|---|
দৈর্ঘ্য | ৬.১৫ কিলোমিটার, ভায়াডাক্ট (স্থলভাগে সেতুর অংশ) সহ দৈর্ঘ্য: ৯.৮৩ কিলোমিটার |
প্রস্থ | ২১.৬৫ মিটার |
মোট পিলারের সংখ্যা | ৪২টি |
স্প্যানের সংখ্যা | ৪১টি |
প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য | ১৫০ মিটার |
স্প্যানগুলোর মোট ওজন | ১,১৬,৩৮৮টন |
প্রতিটি পিলারে নিচে পাইলের সংখ্যা | ৬টি (কিছু কিছু পিলারে ৭টি পাইলও দেওয়া হয়েছে) |
পাইলের ব্যাস | ৩ মিটার |
পাইলের সর্বোচ্চ দৈর্ঘ্য | ১২৮ মিটার |
মোট পাইলের সংখ্যা | ২৬৪টি ( ভায়াডাক্টের পিলারের পাইলসহ ২৯৪টি) |
জমি অধিগ্রহণ | ৯১৮ হেক্টর |
ব্যবহৃত স্টিলের পরিমাণ | ১,৪৬,০০০ মেট্রিক টন |
নদীশাসন | ১৬.২১ কিলোমিটার |
এপ্রোচ রোডের দৈর্ঘ্য | ১২ কিলোমিটার |
সেতুর মোট ব্যয় | ৩০,১৯৩.৩৯ কোটি |
নির্মাণ কাজ শুরু: ২৬ নভেম্বর ২০১৪
মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলারের কাজ দিয়ে । দৈনিক ৭৫ হাজার যানবাহন যাতায়াতের সক্ষমতা রয়েছে । পানির স্তর থেকে সেতুর উচ্চতা ১৮ মিটার, এবং যার আকৃতি ইংরেজি এস (S) অক্ষরের মতো। রিক্টার স্কেলে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীলতা রয়েছে। সেতুর আয়ুষ্কাল রক্ষণাবেক্ষণের উপর ভিত্তি করে ১০০ বছর ধরা হয়েছে।
ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি ২১টি জেলার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে এবং উপকারভোগী ৩ কোটি মানুষ।
বাংলাদেশ, চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, অট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ন্যাদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপান, ডেনমার্ক, ইতালি, মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফিলিপাইন, থাইওয়ান, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলীরা কাজ করেছেন। যার মধ্যে বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রকৌশলী এস. এম. মনিরুজ্জামান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্প্যানটেক কনসালটেন্টস লিমিটেড, পদ্মা সেতু রেল লিং প্রজেক্ট এ Sr. Structural Engineer হিসাবে কাজ করেছেন।
প্রকল্পের অঙ্গ(component) ভিত্তিক ব্যয় বিভাজন:
ক) মূল সেতুর ব্যয়: ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন টাওয়ার ও গ্যাস লাইনের ব্যয়সহ ১১,৯৩৮.৬৩ কোটি টাকা (বরাদ্দ ১২,১৩৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)
খ) নদীশাসন কাজ: ৮,৭০৬.৯১ কোটি টাকা (৯,৪০০ কোটি টাকার বিপরীতে)
গ) অ্যাপ্রোচ রোড: ২টি টোল প্লাজা, ২টি থানা বিল্ডিং ও ৩টি সার্ভিস এরিয়াসহ ১৮৯৫.৫৫ কোটি টাকা (১৯০৭.৬৮ কোটি টাকার বিপরীতে )
ঘ) পুনর্বাসন ব্যয়: ১,১১৬.৭৬ কোটি টাকা (১,৫১৫ কোটি টাকার বিপরীতে)
ঙ) ভূমি অধিগ্রহণ: ২৬৯৮.৭৩ কোটি টাকা
চ) পরিবেশ: ২৬.৭২ কোটি (১২৯.০৩ কোটি টাকা)
ছ) অন্যান্য বেতন ভাতা, পরামর্শক, সেনা নিরাপত্তা ইত্যাদি: ১৩৪৮.৭৮ কোটি (২৪০৯.৫৬ কোটি টাকার বিপরীতে)
প্রকল্পের মোট অনুমোদিত ব্যয়: ২৭,৭৩২.০৮ কোটি টাকা (৩০,১৯৩.৩৯ কোটি টাকার বিপরীতে)
নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ সিন্ধান্ত : ৯ জুলাই ২০১২
প্রথম স্প্যান বসানো হয়: ৩০সেপ্টেম্বর ২০১৭।
সেতুতে বসে শেষ স্প্যান: ১০ ডিসেম্বর ২০২০।
সেতু উদ্বোধন: ২৫ জুন ২০২২।
যানবাহন চলাচল শুরু : ২৬ জুন ২০২২।
(তথ্যসূত্র: পদ্মা সেতু প্রকল্প অফিস, ক্যাবিনেট ডিভিশন, সংবাদ সম্মেলনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার কপি; আপডেট: ২৩ জুন ২০২২)