বেশ মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুম থেকে উঠে সোহান সাহেব বুঝতে পারলেন তার মুখটা ভার ভার লাগছে। মুখ ধুতে গিয়ে দেখলেন- কুলি করার সময় মুখে পানি ধরে রাখতে পারছেন না। আয়নার সামনে গিয়ে দেখলেন- তার মুখ একদিকে বাঁকা হয়ে গেছে। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন জিজ্ঞাস করিল তার কি হয়েছে? পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ডাক্তার জানালেন- তার বেলস পালসি হয়েছে।
বেলস পালসি কি?
বেলস পালসি এমন একটি অবস্থা যা মুখের পেশীতে অস্থায়ী দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত সৃষ্টি করে। এটি তখন ঘটতে পারে যখন মুখের পেশীগুলি নিয়ন্ত্রণ করে (সপ্তম ক্রেনিয়াল স্নায়ু বা ফেসিয়াল নার্ভ) এমন স্নায়ু ফুলে যায়, চাপে পড়ে যায়, ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা আঘাত প্রাপ্ত হয়। এটি সাধারণত একদিকে আক্রান্ত করে, তবে অতি নগন্য সংখ্যক হলেও মুখের উভয় দিকও আক্রান্ত হতে পারে। এর ফলে মুখের অনাক্রান্ত পাশ কুঁচকে যায় বা শক্ত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থ দিকে মুখ বাকা করতে বা চোখ বন্ধ করতে সমস্যা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, এ সমস্যা অস্থায়ী এবং লক্ষণগুলি সাধারণত কয়েক সপ্তাহ পরে চলে যায়। ১৮২৯ সালে স্কটল্যান্ডের একজন সার্জন স্যার চার্লস বেল সর্ব প্রথম এই রোগ সম্পর্কে বর্ণনা দেন। তাঁর প্রতি শ্রোদ্ধা রেখে, এ রোগের নাম দেওয়া হয় Bell’s Palsy.
যদিও বেলস পালসি যে কোনও বয়সে হতে পারে, তবে এ রোগ ১৬ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। প্রতি ৬০ জন মানুষের মধ্যে ১ জনের এ রোগ দেখা দিতে পারে।
এ রোগের সঠিক কারণ অজানা, তবে অনেক চিকিৎসক ও গবেষক বিশ্বাস করেন, এটি সম্ভবত ভাইরাস সংক্রমণের ফলেই হয়ে থাকে।
ঠান্ডা জনিত কারণে কিংবা কানের সংক্রমণ বা চোখের সংক্রমণ হওয়ার এক থেকে দুই সপ্তাহ পরে বেলস পালসির লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে। এগুলি সাধারণত হঠাৎ করে উপস্থিত হয় এবং সকালে ঘুম থেকে ওঠার সময় বা খেতে বা পান করার চেষ্টা করার সময় সেগুলি যে কেউ লক্ষ্য করতে পারেন।
বেলস পালসি এর কি কি লক্ষণ রয়েছে:
- মুখের মাংসপেশি সামান্য ঝুলে যাওয়া,
- খাওয়া দাওয়া করতে সমস্যা,
- মুখের ভাব প্রকাশে অক্ষমতা, যেমন হাসি বা ভ্রূকুচি।
- মুখের দুর্বলতা,মুখের অনাক্রান্ত দিকে পেশী সংকুচিত হয়ে যাওয়া বা বাঁকা হয়ে যাওয়া।
- শুকনো চোখ এবং মুখ,
- চোখ বন্ধ করতে না পারা,
- মাথাব্যথা,
- শব্দ সংবেদনশীলতা,
- জড়িত দিকে চোখ জ্বালা।
এসব লক্ষণ অন্যান্য গুরুতর রোগের ক্ষেত্রেও হতে পারে, যেমন স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের টিউমার। তাই এই লক্ষণগুলি কারো দেখা দিলে, শুধু বেলস পালসি মনে না করে, সাথে সাথে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বেলস পালসির ঝুঁকিতে কারা বেশি আছে?
গর্ভবতী মহিলা, ডায়াবেটিস রুগী, ফুসফুসের সংক্রমণ আছে এমন ব্যক্তি, উচ্চ রক্তচাপ ভুগছেন এমন রুগী, অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তি, রোগটি পরিবারের কারো হয়েছিল এমন ব্যক্তি।
বেলস পালসি রোগের চিকিৎসা কি?
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চিকিৎসা ছাড়াই বেলস পালসির লক্ষণগুলি উন্নত হয়। তবে মুখের পেশীগুলির স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পেতে কয়েক সপ্তাহ বা মাস সময় নিতে পারে।সাধারণত চিকিৎসকেরা এ রোগের দ্রুত উপশমের জন্য কর্টিকোস্টেরয়েড, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, কিছু ব্যথানাশক ঔষধ ও চোখের ড্রপ দিয়ে থাকেন।
মুখের পেশীগুলির স্বাভাবিক শক্তি ফিরে পেতে করণীয় কি?
এ ব্যাপারে রুগীকে অবশ্যই একজন গ্রাজুয়েট ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বা ফিজিওথেরাপিস্টের কাছে যেতে হবে। তিনি রুগির সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণ করে তার জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম, অন্যান্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও পরামর্শ প্রদান করবেন।
বেলের পালসির সম্ভাব্য জটিলতাগুলি কী কী?
বেশিরভাগ বেলস পালসির রুগী জটিলতা ছাড়াই পুরোপুরি স্বাভাবিক ও সুস্থ হয়ে উঠে। তবে গুরুতর বেলস পালসির ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ মুখের পেশী নিয়ন্ত্রণকারী সপ্তম ক্রেনিয়াল নার্ভ স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।চোখে অতিরিক্ত শুষ্কতা দেখা দিতে পারে যা চোখের সংক্রমণ, আলসার, এমনকি অন্ধত্ব হতে পারে।সিঙ্কাইনেসিস হতে পারে। এটি এমন একটি অবস্থা যাতে দেহের একটি অংশকে নড়াচড়া করালে অন্য অংশ অনিচ্ছাকৃতভাবে সরে যায়। যেমন- কেউ হাসলে তার চোখ বন্ধ হয়ে যায়।
কনসালটেন্টঃ
ডাঃ টি এম মনজুরুল ইসলাম স্বপন
(ফিজিওথেরাপিস্ট)
বিপিটি (নিটোর, ডি ইউ)
এমফিল (বি এস এম এম ইউ)
এন ও এম এ ফেলো ( অসলো বিশ্ববিদ্যালয়, নরওয়ে)
মোবাইল – ০১৭৯৫৫৪৩৮৩৯