প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চা পরিবর্তনশীল । বর্তমান বাংলা সাহিত্যে যে বিষয় গুলো প্রাধান্য পায়, অথবা আধুনিক বাংলা সাহিত্য বলতে সাহিত্যের যে অংশ গুলো বোঝানো হয়ে থাকে সেগুলোর সাথে কয়েক যুগ আগের সাহিত্য চর্চার বিষয়ের পার্থক্য রয়েছে। প্রাচীনকাল থেকে বাংলা সাহিত্যের বিবর্তনের এই ধারা প্রভাবিত হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের কিছু সাহিত্যিক দের মাধ্যমে।
কালবিচারে বাংলা সাহিত্য কে তিনটে প্রধান ভাগে ভাগ করা যায় –
- প্রাচীন যুগ (৬৫০-১২০০)
- মধ্যযুগ (১২০০-১৮০০)
- আধুনিক যুগ (১৮০০-)
প্রাচীন যুগঃ
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ব্যাপ্তি ৬৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। “চর্যাপদ” এই যুগের একমাত্র নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক নিদর্শন বা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের প্রথম গ্রন্থ বা বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন। চর্যাপদের পদগুলির কয়েকজন পদকর্তার মধ্যে লুইপা, ভুসুকুপা, কাহ্নপা, শবরপা প্রমুখ উল্লেখযোগ্য।
মধ্যযুগঃ
বাংলা সাহিত্যের মধ্য যুগ ব্যাপ্তি ১২০১-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত। এই যুগে বাংলা সাহিত্যের জন্য কিছু অনবদ্য সৃষ্টি রয়েছে যা বাংলা সাহিত্য কে করেছে সমৃদ্ধময় তার মধ্যে রয়েছে – শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, শূন্যপুরাণ, সেক শুভোদয়া, বৈষ্ণব পদাবলী, মঙ্গলকাব্য, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল , কলিকামঙ্গল, কিছু জীবনী সাহিত্য, মহাভারত, রামায়ণ, ভাগবত, ইত্যাদি।
মধ্যযুগ আবার তিন ভাগে বিভক্ত –
- আদি-মধ্যযুগ/অন্ধকার যুগ (১২০০-১৩৫০)
- মধ্য-মধ্যযুগ (১৩৫০-১৭০০) ও
- অন্ত্য-মধ্যযুগ (১৭০০-১৮০০)
আধুনিক যুগঃ
১৮০০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় ইলিয়াম কলেজ যার মাধ্যমে গদ্য রচনা ও চর্চার সূত্রপাত ঘটে এবং আধুনিক বাংলা সাহিত্যের সূত্রপাত এখান থেকেই শুরু হয়। বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের প্রথম পর্বটি সমৃদ্ধ করেন কিছু পারি এবং সাংস্কৃতি পণ্ডিতের গদ্য রচনার মাধ্যমে দ্বিতীয় পর্বের সমৃদ্ধ ঘটায় বাঙালি সাহিত্যিকদের কিছু সৃষ্টিশীল ও চিন্তাশীল শিল্পকর্মের মাধ্যমে এবং তৃতীয় পর্বটি উৎকৃষ্ট প্রাচুর্যময় ঘটায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর প্রাধান্য বিস্তারের মাধ্যমে। এবং চতুর্থ পর্ব যা বাংলাদেশের সাহিত্য সমৃদ্ধ ঘটেছে বাংলাদেশ-এর স্বাধীনতার পর বাঙালি সাহিত্যের অগ্রসর হয়েছে তা মূলত স্বাধীনচেতা এবং মুক্তমনা কিছু লেখক এর মাধ্যমে ।
আধুনিক যুগকেও কয়েকটি ভাগে বিভক্ত-
- প্রস্তুতি পর্ব (১৮০০-১৮৬০),
- বিকাশের যুগ (১৮৬০-১৯০০),
- রবীন্দ্রপর্ব (১৯০০-১৯৩০),
- রবীন্দ্রোত্তর পর্ব (১৯৩০-১৯৪৭) এবং
- বাংলাদেশ পর্ব (১৯৪৭-)।
তথ্যসূত্রঃ
- মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, বাংলা সাহিত্যের কথা,
- মুহম্মদ আবদুল হাই ও সৈয়দ আলী আহসান, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত,
- সুকুমার সেন, বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস
- অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলা সাহিত্যের ইতিবৃত্ত ,
- বাংলা সাহিত্যের সমগ্র ইতিহাস, ক্ষেত্র গুপ্ত, গ্রন্থনিলয়, কলকাতা, ২০০১