বাংলা সাহিত্যের সময়কালকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে এগুলো হলো বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ বাংলা সাহিত্যের মধ্যে বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগ।
ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের ব্যাপ্তি কাল ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। অপর দিকে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এর মতে তা ৯৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।
তৎকালীন বাংলায় অর্থাৎ ৬৫০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২০০ প্রতিষ্ঠিত পর্যন্ত পাল রাজাদের শাসন আমল. পাল রাজাদের শাসন কালে বুদ্ধ ধর্মগুরুরা বৌদ্ধ ধর্ম গুরু ধর্মচর্চা ও উত্তরীয় কথাগুলো লিপিবদ্ধ করে টিকা তৈরি করে যা পরবর্তীতে চর্যাপদ নামে পরিচিত হয় ।
শশাঙ্কের রাজত্বের পরবর্তী প্রায় একশ’ বছর বাংলার ইতিহাস অনেকাংশেই অন্ধকারাচ্ছন। তথ্যের অভাবে এ সময় অর্থাৎ সপ্তম শতাব্দীর মাঝামাঝি হতে অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি কাল পর্যন্ত বাংলার ইতিহাস রচনা করা কঠিন।
হিউয়েন সাং (আনুমানিক ৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে)-এর বর্ণনায় কজঙ্গল, পুন্ড্রবর্ধন, কর্ণসুবর্ণ, সমতট ও তাম্রলিপ্তি -এই পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যের উল্লেখ আছে।
শশাঙ্কের মৃত্যুর পর বাংলার সিংহাসন অধিগ্রহণ করে গোপাল ।পাল রাজাদের শাসন ব্যবস্থায় সারা বাংলায় শুরু হয় পরবর্তীতে বিভিন্ন পাল রাজা বাংলা শাসন করে।
একাদশ শতাব্দীতে পাল রাজাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাংলা শাসন ব্যবস্থার দায়িত্বভার গ্রহণ করে এবং তাদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করে যারা নেপালে গিয়ে অবস্থান করে।
বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ এর নিদর্শনঃ
১৯০৭ সালে নেপালের রাজা আমন্ত্রণে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের ওয়াইল্ডলাইফ গমন করেন এবং তিনি আবিষ্কার করেন চর্যাপদ জাবরাজান রাজেন্দ্রলাল মিত্র তার “Sanskrit Buddhist Literature In Nepal” গ্রন্থে লিখেছিলে ১৮৮২ সালে।
পরবর্তিতে হাজার 916 সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রকাশ করে “হাজার বছরের পুরান বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” । এই গ্রন্থটির মূলত চর্যাপদ, ডাকার্নব, সরহপাদের ও কৃষ্ণ পাদের দোহা এর সংকলন ।
১৯২৬ সালে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন চর্যাপদ সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় রচনা করা হয়েছিল।
১৯২৭ সালে ডঃ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সর্বপ্রথম চর্যাপদ কে ধর্মীয় আলোচনা বলে মনে করে । তার মতে বৌদ্ধ ধর্ম তত্ব নিয়ে আলোচনা করেছেন।
চর্যাপদঃ
সুকুমার সেনের মতে চর্যাপদের পদ সংখ্যা ৫১ টি কিন্তু ডক্টর শহীদুল্লাহর মতে চর্যাপদের পদ সংখ্যা ৫০ টি ।
চর্যাপদে মোট ৪৬ টি পদ আবিষ্কৃত হয়েছে কিছু পদ পাওয়া যায়নি কিছু একটি পদের অর্ধেক পাওয়া গিয়েছে। এই চর্যাপদে মোট ২৪ জন রচয়িতা রয়েছে। ২৪ জন কবি ছিলেন বৌদ্ধ ধর্ম অবলম্বী । এই কবিদের বলা হয় পা। এঁরা হলেন: লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জয়নন্দী, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী।
লুইপা কে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের আদি কবি। তিনি মোট ২ টি পদ লিখেছেন। চর্যার টীকায় তাঁর অন্য নাম লূয়ীপাদ বা লূয়ীচরণ
কিন্তু সর্বাধিক পদ রচয়িতা কুহ্ন পা। তিনি কৃষ্ণচার্য নাম পরিচিত। তার রচিত পদ সংখ্যা ১৩ টি।
ভুসুকুপা বাঙালি ছিলিন বলে সবাই মনে করেন। তিনি ৮ টি পদ রচনা করেন।
চর্যাপদের রচয়িতা তালিকাঃ
রচয়িতার নাম | পদ সংখ্যা | পদ নং |
লুইপা | ২ | ১ ও ২৯ |
কাহ্নপা | ১৩ | ৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ৩৬, ৪০, ৪২ ও ৪৫ (কিন্তু ২৪ নং পাওয়া যায় নাই ) |
ভুসুকুপা | ৮ | ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯ |
সরহপা | ৪ | ২২, ৩২, ৩৮, ৩৯ |
কুক্কুরীপা | ৩ | ২, ২০, ৪৮ |
শান্তিপা | ২ | ১৫ ও ২৬ |
শবরপা | ২ | ২৮ ও ৫০ |
বিরুআ | ১ | ৩ |
গুণ্ডরী | ১ | ৪ |
চাটিল | ১ | ৫ |
কম্বলাম্বরপা | ১ | ৮ |
ডোম্বীপা | ১ | ১৪ |
মহিণ্ডা | ১ | ১৬ |
বীণাপা | ১ | ১৭ |
আজদেব | ১ | ৩১ |
ঢেণ্ঢণ | ১ | ৩৩ |
দারিক | ১ | ৩৪ |
ভদ্রপাদ | ১ | ৩৫ |
তাড়ক | ১ | ৩৭ |
কঙ্কণ | ১ | ৪৪ |
জয়নন্দী | ১ | ৪৬ |
ধাম | ১ | ৪৭ |
তান্তী পা | ১ | ২৫ |
নাড়ীডোম্বীপা | ০ | পাওয়া যায় নি |
তথ্যসূত্রঃ