অপারেশন সার্চলাইট শব্দটি বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বাংলা ইতিহাসের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। যার মাধ্যমে স্বাধীনতার ইতিহাসের সূচনা লগ্নে যে গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তার প্রকাশ ঘটে।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ রাত তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানে যে অভিযান পারিচালনা করে তার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন সার্চলাইট’। ২৫ শে মার্চ এ অভিযান চালনা করলেও তার পরিকল্পনা করেছে মূলত মার্চের প্রথম থেকেই ।
১৬ মার্চ বঙ্গবন্ধুর সাথে সমঝোতা বৈঠক শুরু হয়। আর অন্যদিকে ইয়াহিয়া গোপনে আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করেন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সেনা এবং গোলাবারুদ এনে পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
১৮ মার্চ টিক্কা খান আরমান আলী ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইটের নীলনকশা তৈরি করেন।
১৯ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট বাঙালি সেনাদের নিরস্ত্রীকরণ শুরু হয় এই কারণে জয়দেবপুর তথা গাজীপুরে সংঘর্ষ বাধে এটি ছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম সামরিক সশস্ত্র প্রতিরোধ ।
25 মার্চ গণহত্যার জন্য বেছে নেয় সার্বিকভাবে এই পরিকল্পনার তত্ত্বাবধান করেন গভর্নর লেঃ জেনারেল টিক্কা খান টিক্কা খান । তৎকালীন পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন টিক্কা খান । সামরিক সৈনিকদের নির্দেশনা দিয়েছেন দিয়ে বলেছিলেন এদেশের মানুষ চাইনা মাটি চাই পোড়ামাটির নীতি নিয়ে গণহত্যা গণহত্যায় নেমে পড়ে পড়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
অপারেশন সার্চলাইট তথা পোড়ামাটির নীতিঃ
“পোড়ামাটির নীতি” এর অর্থ হলো সবকিছু ধ্বংস করে হলেও মাটির উপর দখল বজায় রাখা। এই অভিযানে ঢাকা শহরের মূল দায়িত্ব দেয়া হয় জেনারেল রাও ফরমান আলী । এবং অন্য সব স্থানের সৈনিকদের কমান্ডে ছিলেন মেজর জেনারেল খাদিম হাসেন রেজা । গণহত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আগে থেকেই পাকিস্তান আর্মি তে কর্মরত বাঙালি অফিসারদের হত্যা কিংবা গ্রেপ্তার কারার চেষ্টা করা হয় । ঢাকার পিলখানা, রাজার বাগ পুলিশ লাইন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম ইবিআরসি সহ সারাদেশের সামরিক ও অসামরিক সৈনিকদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয় । এই হত্যাকাণ্ডের কথা যেন বহিঃবিশ্ব জানতে না পারে সেজন্য আগে থেকে বিদেশি সাংবাদিকদের গতিবিধির উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। এবং অনেককে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয় তবে ডেইলি টেলিগ্রাফের বিখ্যাত সাংবাদিক সায়মন ড্রিং জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের রিপোর্ট প্রকাশ করে ।
বাংলাদেশের গণহত্যার ওপর প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন তাকে বিশ্বজোড়া খ্যাতি ও সুনাম এনে দেয়। সায়মন ড্রিং বাংলাদেশের গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী প্রথম বিদেশি সাংবাদিক যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে সরেজমিন প্রতিবেদন তৈরি করে সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেন পাকিস্তানী বাহিনীর লোমহর্ষক নির্যাতন ও গণহত্যার কথা।
তৎকালীন পাকিস্তানে সামরিক আইনের তোয়াক্কা না করে ২৭ মার্চ তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করে ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকায় প্রতিবেদন আকারে প্রেরণ করেন যা ট্যাংকস ক্র্যাশ রিভোল্ট ইন পাকিস্তান ( শিরোনামে ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত সৃষ্টিতে তার এ প্রতিবেদনটি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে সাড়া জাগিয়েছিল। উক্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে,
আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত ও সন্ত্রস্ত এক নগর। পাকিস্তানি সৈন্যদের ঠান্ডা মাথায় টানা ২৪ ঘণ্টা গোলাবর্ষণের পর এ নগরের।
আর এর মধ্যে দিয়ে বিশ্ব এই গণহত্যার সম্পর্কে অবগত হয় হাজার ২০১৭ সালে বাংলাদেশ সরকার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২৫ শে মার্চকে গণতন্ত্র গণহত্যা দিবস পালনের নির্দেশ দেয়.
Pingback: স্বাধীনতার ঘোষণা - Gyangrriho